হেলিকপ্টার ভাড়া করার বিষয়টি অনেকেই রোমাঞ্চকর মনে করেন। তবে এটি কেবলমাত্র রোমাঞ্চের জন্য নয়, জরুরী সেবা, ব্যবসায়িক ভ্রমণ, পর্যটন ও আরও নানা কাজে হেলিকপ্টারের প্রয়োজন হতে পারে। জরুরি প্রয়োজন কিংবা কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে দ্রুত যাতায়াতের জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে হেলিকপ্টার ভাড়া করা যেনো সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। একসময়ের কল্পনাপ্রবণ স্বপ্ন আজকের দিনে সহজে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। হেলিকপ্টার ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুততম সমাধান পাওয়া যায়। বিশেষ করে দুর্গম স্থানে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য হেলিকপ্টার অপ্রতিদ্বন্দ্বী। বিয়ে বা অন্যান্য বিশেষ অনুষ্ঠানে হেলিকপ্টারে করে যাত্রা করা এক ধরণের মর্যাদার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি আপনার অনুষ্ঠানের গুরুত্ব এবং আড়ম্বর অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। তাই হেলিকপ্টার ভাড়ার খরচ সম্পর্কে ধারণা থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
হেলিকপ্টার ভাড়া কত টাকা
বিভিন্ন কোম্পানি এবং ক্যাটাগরির হেলিকপ্টারের জন্য ভাড়ার হার ভিন্ন হতে পারে। হেলিকপ্টার ভাড়ার ক্ষেত্রে প্রধানত সময়ের ভিত্তিতে খরচ নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত ১ ঘণ্টার জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া করতে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়। তবে কিছু হেলিকপ্টার ভাড়া ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্তও হতে পারে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী হেলিকপ্টার ভাড়ার সময় নির্ধারণ করুন। ভাড়ার মোট খরচ নির্ভর করবে আপনি কত সময়ের জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া নিচ্ছেন এবং কোন কোম্পানির হেলিকপ্টারটি ভাড়া করছেন তার উপর। নিম্নে কিছু হেলিকপ্টার ভাড়া দেওয়া হলেঃ
কোম্পানির নাম | হেলিকপ্টার | আসন সংখ্যা | ভাড়া (প্রতি ঘণ্টা) |
---|---|---|---|
সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স | বেল-৩২৭ | ৭ আসন | ৭৫,০০০ টাকা |
স্কয়ার এয়ার লিমিটেড | রবিনসন আর-৬৬ | ৪ আসন | ৭৫,০০০ টাকা |
স্কয়ার এয়ার লিমিটেড | বেল-৪২৯ | ৬ আসন | ৮০,০০০ টাকা |
ইমপ্রেস অ্যাভিয়েশন লিমিটেড | এসি ১৩০বি-৪ | ৬ আসন | ১,০০,০০০ টাকা |
সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স | এমআই-১৭ | ২০ আসন | ১,৫০,০০০ টাকা |
বাংলাদেশে হেলিকপ্টার ভাড়া কত টাকা
কোম্পানি | যাত্রী ধারণক্ষমতা | প্রতি ঘণ্টার ভাড়া (টাকা) | অতিরিক্ত খরচ | ওয়েবসাইট |
---|---|---|---|---|
হেলিকপ্টার বাংলাদেশ | ৪-৬ আসন | ৭০,০০০ – ১,২০,০০০ টাকা | ল্যান্ডিং চার্জ, ওভারনাইট চার্জ, ভ্যাট | ভিজিট ওয়েবসাইট |
হেলিকপ্টার সার্ভিস বাংলাদেশ | ৪-১৪ আসন | ৭৫,০০০ – ২,২৫,০০০ টাকা | ল্যান্ডিং চার্জ, ওভারনাইট চার্জ, ভ্যাট | ভিজিট ওয়েবসাইট |
মেঘনা এভিয়েশন | ৪-১২ আসন | ৮০,০০০ – ১,৮০,০০০ টাকা | ল্যান্ডিং চার্জ, ওভারনাইট চার্জ, ভ্যাট | ভিজিট ওয়েবসাইট |
বাংলাদেশ হেলিকপ্টার সার্ভিস | ৬-১৪ আসন | ৯৫,০০০ – ২,৪৫,০০০ টাকা | ল্যান্ডিং চার্জ, ওভারনাইট চার্জ, ভ্যাট | ভিজিট ওয়েবসাইট |
বিয়ের জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া কত টাকা
কোম্পানি | যোগাযোগের নাম্বার |
বেঙ্গল হেলিকপ্টার্স | +880 1608901667 |
পদ্মা এভিয়েশন | +880 1708450244 |
এয়ার সেন্টার লিমিটেড | +880 1821-626749 |
সিমেক এভিয়েশন | +880 1849-920409 |
ভাড়ার খরচ নির্ধারণে প্রভাব
হেলিকপ্টার ভাড়ার খরচ নির্ধারণে অনেকগুলো প্রভাবক কাজ করে। নিচে প্রধান প্রভাবকগুলো আলোচনা করা হলো:
- হেলিকপ্টারের ধরন ও মডেলঃ হেলিকপ্টারের ধরন ও মডেল অনুযায়ী ভাড়ার খরচে পার্থক্য দেখা যায়। হালকা হেলিকপ্টার যেমন রোবিনসন আর৪৪ (Robinson R44) কম খরচে ভাড়া করা যায়, কিন্তু বড় এবং আরও শক্তিশালী হেলিকপ্টার যেমন সিকোরস্কি এস৭৬ (Sikorsky S-76) বা আগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ড এডব্লিউ১৩৯ (AgustaWestland AW139) বেশি খরচে ভাড়া করা হয়।
- ভ্রমণের দূরত্ব ও সময়ঃ ভ্রমণের দূরত্ব এবং সময় অনুযায়ী খরচে পার্থক্য হতে পারে। সাধারণত হেলিকপ্টার ভাড়া ঘণ্টা হিসেবে নির্ধারিত হয়, এবং প্রতি ঘণ্টার খরচ নির্ভর করে হেলিকপ্টারের ধরন ও মডেলের ওপর। দূরত্ব বেশি হলে এবং সময় বেশি লাগলে খরচও বেশি হবে।
- ল্যান্ডিং ফি ও অন্যান্য শুল্কঃ হেলিকপ্টারের ল্যান্ডিং ফি, এয়ারপোর্টের শুল্ক, ফুয়েল সারচার্জ এবং অন্যান্য শুল্ক খরচ বাড়াতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এই শুল্কগুলো ভাড়ার সাথে সংযুক্ত হয়, যা ভাড়ার মোট খরচ বৃদ্ধি করে।
- মৌসুম এবং চাহিদাঃ হেলিকপ্টার ভাড়ার খরচ মৌসুম ও চাহিদার ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। পর্যটন মৌসুমে চাহিদা বেশি থাকলে ভাড়ার খরচ বাড়ে, অন্যদিকে অফ-সিজনে খরচ কিছুটা কম হতে পারে।
বিভিন্ন প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ভাড়ার খরচ
- জরুরি স্বাস্থ্য সেবাঃ জরুরি স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে হেলিকপ্টার ভাড়া অত্যন্ত জরুরি হতে পারে। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে হেলিকপ্টারের ব্যবহার বাড়ছে, যা দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে পৌঁছাতে সাহায্য করে। তবে এই ধরনের সেবার খরচ সাধারণত বেশি হয়ে থাকে কারণ এটি অত্যাধুনিক সরঞ্জাম এবং বিশেষজ্ঞ কর্মীর উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে।
- ব্যবসায়িক ভ্রমণঃ ব্যবসায়িক ভ্রমণের জন্য হেলিকপ্টার একটি কার্যকর মাধ্যম। ব্যবসায়িক মিটিং, কারখানা পরিদর্শন বা অন্য কোনও জরুরি কাজের জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহৃত হতে পারে। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে হেলিকপ্টার ভাড়ার খরচ নির্ভর করে ভ্রমণের দূরত্ব, সময় এবং ব্যবহৃত হেলিকপ্টারের ধরন ও মডেলের ওপর।
- পর্যটন ও ভ্রমণঃ পর্যটন ও ভ্রমণের জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়। পর্যটকদের জন্য বিশেষ ট্যুর প্যাকেজও অফার করা হয়, যা নির্দিষ্ট স্থান ভ্রমণের খরচ অন্তর্ভুক্ত করে। এ ধরনের ভ্রমণের খরচ সাধারণত নির্ধারিত হয় প্যাকেজের ওপর ভিত্তি করে।
- চলচ্চিত্র ও মিডিয়াঃ চলচ্চিত্র এবং মিডিয়ার কাজে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়। সিনেমা শুটিং, বিজ্ঞাপন বা অন্য কোনো মিডিয়া প্রজেক্টের জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া করা হতে পারে। এই ধরনের কাজে খরচ নির্ভর করে শুটিংয়ের সময় এবং ব্যবহৃত সরঞ্জামের ওপর।
হেলিকপ্টার ভাড়া করার আগে বিবেচ্য বিষয়
- সুরক্ষা ও নিরাপত্তাঃহেলিকপ্টার ভাড়া করার সময় সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান থেকে হেলিকপ্টার ভাড়া করা উচিত এবং পাইলটের অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া উচিত।
- ইন্স্যুরেন্সঃ হেলিকপ্টার ভাড়া করার সময় ইন্স্যুরেন্স কভারেজ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া উচিত। এটি যেকোনো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করে।
- শর্তাবলীঃ ভাড়া করার আগে শর্তাবলী সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেয়া উচিত। বাতিলকরণ নীতি, অতিরিক্ত খরচ এবং অন্যান্য শর্তাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জানলে অপ্রত্যাশিত খরচ এড়ানো যায়।
- প্যাকেজ ও অফারঃ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্যাকেজ ও অফার প্রদান করে থাকে। ভাড়া করার আগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্যাকেজ ও অফার সম্পর্কে জানলে খরচ কমানো সম্ভব।
শেষ কথা
হেলিকপ্টার ভাড়া করা একটি জটিল প্রক্রিয়া হতে পারে, কিন্তু সঠিক তথ্য এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে এটি সহজ হয়ে যায়। ভাড়ার খরচ নির্ভর করে বিভিন্ন প্রভাবকের ওপর, যেমন হেলিকপ্টারের ধরন, ভ্রমণের দূরত্ব, ল্যান্ডিং ফি, মৌসুম ইত্যাদি। সঠিক প্রতিষ্ঠান থেকে ভাড়া করলে এবং শর্তাবলী ভালোভাবে জেনে নিলে হেলিকপ্টার ভাড়া করা একটি সার্থক ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা হতে পারে।