১২ কেজি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ২০২৪

১২ কেজি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম

বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় সকল জিনিসের দাম বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি পণ্য হলো রান্নার গ্যাস বা এলপিজি (লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) সিলিন্ডার। বিশেষ করে ১২ কেজি গ্যাস সিলিন্ডার সাধারণ পরিবারের জন্য অন্যতম আবশ্যকীয় জিনিস। বাংলাদেশে রান্নার প্রধান উৎস হিসেবে এলপিজি গ্যাসের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, যা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এক ধরনের অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে। ২০২৪ সালে এর ১২ কেজি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

১২ কেজি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম

এলপিজি বা লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস হচ্ছে এমন একটি জ্বালানি যা পেট্রোলিয়াম পণ্য হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের শোধনাগারে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়। গ্যাসের বহুমুখী ব্যবহারের কারণে এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। একসময় যেখানে কেবলমাত্র শহরাঞ্চলে গ্যাসের ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল, এখন গ্রামাঞ্চলেও এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রান্নাবান্না ছাড়াও গৃহস্থালী ও শিল্প কারখানায় এর বহুল ব্যবহার দেখা যায়। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎস কমে আসায় সরকার এলপিজি গ্যাসের ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে। এলপিজি গ্যাসের সহজলভ্যতা এবং পরিবহনযোগ্যতার কারণে এর চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যেখানে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব নয়, সেখানে এলপিজির চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। নিচে ১২ কেজি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম দেওয়া হলেঃ

১২ কেজি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম এর তালিকা

কোম্পানি নামদাম (টাকা)
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (BPC)১,৪২১ টাকা
বাংলাদেশ জ্বালানি ও তেল কর্পোরেশন (BOC)১,৪২১ টাকা
যমুনা অয়েল১,৪২১ টাকা
বসুন্ধরা এলপিজি১,৪২১ টাকা
ওমেরা১,৪২১ টাকা
এস.কে. এলপিজি১,৪২১ টাকা
ন্যাশনাল এলপিজি১,৪২১ টাকা

গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বৃদ্ধির কারন

গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি সরাসরি সাধারণ মানুষের রান্নার খরচ বাড়িয়ে তুলছে। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এই বৃদ্ধি একটি বড় আর্থিক চাপ। অনেকেই এখন বিকল্প হিসেবে কাঠ বা অন্যান্য জ্বালানি ব্যবহারের চেষ্টা করছেন, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং পরিবেশ দূষণ বাড়ায়। এছাড়া, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি শিল্প কারখানার উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে তুলছে, যার প্রভাব দেশের অর্থনীতির উপরেও পড়ছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প মালিকেরা তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থায় প্রয়োজন দ্রুত সমাধান।

  • আন্তর্জাতিক তেলের দামঃ গ্যাস সিলিন্ডারের দামের সাথে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তেলের দামের ঊর্ধ্বগতি সরাসরি এলপিজি গ্যাসের দামের উপর প্রভাব ফেলে। ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক তেলের বাজার অস্থিরতা এবং উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে ভিন্নমত এই দামের বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
  • উৎপাদনকারী দেশগুলোর ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিঃ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিভিন্ন দেশে চলমান যুদ্ধাবস্থা তেলের উৎপাদন ও সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করছে। এই পরিস্থিতি গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করছে।
  • মুদ্রাস্ফীতিঃ বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে চলেছে, যা সমস্ত ধরনের পণ্যের দামে প্রভাব ফেলছে। মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির ফলে গ্যাস সিলিন্ডারের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।
  • সরবরাহ ও চাহিদার অনুপাতঃ বাড়তি চাহিদা এবং সরবরাহ সংকটের কারণে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কেবলমাত্র আবাসিক ব্যবহারে নয়, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও গ্যাসের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে, যা চাহিদা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
  • সরকারি নীতিঃ সরকারি ভর্তুকি এবং নতুন করনীতিও গ্যাসের দামের উপর প্রভাব ফেলছে। সরকার বিভিন্ন সময়ে ভর্তুকি কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়, যা গ্যাসের দামে বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বৃদ্ধির প্রভাব

  • গৃহস্থালির বাজেটের উপর প্রভাবঃ ১২ কেজি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের গৃহস্থালির বাজেটে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোকে তাদের মাসিক ব্যয়ের ক্ষেত্রে কাটছাঁট করতে হচ্ছে।
  • রেস্তোরাঁ ও খাদ্যসেবা খাতের উপর প্রভাবঃ রেস্তোরাঁ এবং ক্যাটারিং ব্যবসায় গ্যাসের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে তাদের খাদ্যপণ্যের দামও বাড়ছে, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের উপর প্রভাব ফেলছে।
  • পরিবেশগত প্রভাবঃ গ্যাসের উচ্চমূল্যের কারণে অনেক পরিবার এবং প্রতিষ্ঠান জ্বালানির বিকল্প উৎস খুঁজে নিচ্ছে। এর ফলে কাঠ এবং কয়লার ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

শেষ কথা

১২ কেজি গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবনে ব্যাপকভাবে পড়েছে। রান্নার খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই আর্থিক চাপের মধ্যে পড়েছেন। তবে সরকারের সঠিক উদ্যোগ এবং জনগণের সচেতনতার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব। ভবিষ্যতে এলপিজি গ্যাসের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে নীতিনির্ধারণী উদ্যোগ নিতে হবে এবং জনগণকে সচেতন হতে হবে। এলপিজি গ্যাসের ব্যবহার, মূল্য এবং এর প্রভাব সম্পর্কে আমাদের এই বিশ্লেষণ আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে। ভবিষ্যতে এই সমস্যা সমাধানে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top